আন্তর্জাতিক ডেস্ক : উঁচু ভবন বেয়ে অনায়াসে ওঠানামা করতেন। কোনও সুরক্ষা ছাড়াই আকাশছোঁয়া বাড়ির ছাড়ে উঠে সেলফি তোলা যেন তার নেশা হয়ে গিয়েছিল। সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠায় এক সময় সেটাকেই পেশা হিসেবেও বেছে নেন। কিন্তু জীবন বাজি রেখে বহুতল ভবনে উঠে সেলফি তুলতে গিয়ে অবশেষে প্রাণ হারাতে হয়েছে চীনের ২৬ বছর বয়সী স্ট্যান্টম্যান ইউ ইয়ুংনিং। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট।
উঁচু ভবন বা বিপজ্জনক স্থানে সেলফি তুলে তা সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করতেন ইয়ুংনিং। কিন্ত গত মাসের প্রথম সপ্তাহের পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে তার খুব একটা উপস্থিতি দেখা যায়নি। হঠাৎ করেই যেন হাওয়া হয়ে গেলেন এই জনপ্রিয় স্ট্যান্টম্যান। ৮ নভেম্বর চীনের হুনান প্রদেশের চাংশায় একটি ৬২ তলা ভবনের ছাদে ঝুলে কসরত দেখাতে গিয়ে সেখান থেকেই পড়ে মারা যান ইয়ুংনিং।
সামাজিক মাধ্যমে তার বহু ফ্যান-ফলোয়ার রয়েছে। ভক্তদের কাছে চীনা সুপারম্যান নামেই পরিচিত তিনি। মার্শাল আর্ট জানা ইয়ুংনিং তরুণদের মধ্যে যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিলেন। বেশ কিছু সিনেমায় স্টান্টম্যান হিসেবে কাজও করেছেন তিনি। সম্প্রতি সে সব ছেড়ে পুরোপুরি নিজের মত করে চলছিলেন।
চীনের সামাজিক মাধ্যমে চড়া দামে বিক্রি হতো তার ছবি আর ভিডিও। তবে ৮ নভেম্বরের পর সামাজিক মাধ্যমে তার আর কোনো নতুন ছবি, ভিডিও দেখতে না পেয়ে ভক্তরা উগ্বিগ্ন হয়ে উঠেন। এরপরেই তার মৃত্যুর খবর সামনে আসে।
সম্প্রতি সব জল্পনা থামিয়ে ইয়ুংনিংয়ের প্রেমিকা সামাজিক মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর দেন। সেই সূত্রেই প্রকাশ্যে আসে ইউয়ের তোলা শেষ ভিডিও ক্লিপটি। দেখা যাচ্ছে, বহুতলের ছাদের কিনারে ঝুলছেন ইউ। সেলফি স্টিকে উঠছে ছবি। কসরত দেখিয়ে ফের ছাদে উঠতে গিয়েই বিপত্তি। স্বল্প দৈর্ঘ্যের ওই ভিডিওতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে আলগা হচ্ছে ইয়ুংনিংয়ের হাতের মুঠো। নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন তিনি।
কিছুক্ষণ ওভাবে ঝুলে থাকার পরেই পড়ে যান তিনি। মাস দু’য়েক আগে শিকাগোর এক হোটেলে এমনই কসরত দেখাতে গিয়ে মারা যান বছর চুয়াল্লিশের এক ব্যক্তি। ইয়ুংনিংয়ের মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠছে, কীসের টানে এই ঝুঁকির খেলায় মাতছে নতুন প্রজন্ম? পুলিশের ভূমিকাই বা কী?
জানা গিয়েছে, প্রায় ২০ হাজার ডলারের বিনিময়ে প্রাণ বাজি রেখে ওই বহুতলের ছাদে উঠেছিলেন ইউ। মায়ের চিকিৎসা আর নিজের বিয়ের টাকা জোগাড় করতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। তবে কে বা কারা ইয়ুংনিংকে ওই বিপুল টাকার চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন তা অবশ্য জানা যায়নি।
পুলিশ বলছে, কোনও রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া এই ধরনের কসরত দেখানো বেআইনি। বহু ক্ষেত্রেই জখম হন খেলোয়াড়রা। তাই ইয়ুংনিংয়ের মতো তরুণদের সতর্ক করতে সম্প্রতি কয়েকজনকে আটক করেছে চীনের পুলিশ।